কল্যাণ অধিকারী, স্টিং নিউজ, হাওড়া: আজ বৃহস্পতিবার, বিশ্ববরেণ্য কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৮ তম জন্ম জয়ন্তী। প্রতি বছরের মত এবারও নিজের দু’কামরা ঘরে এই দিনটি পালনের জন্য জোড় প্রস্তুতি শুরু করেছেন বুধবার থেকেই। মেঝেতে মেলা রয়েছে পেনসিলে আঁকা রবিঠাকুরের একাধিক ছবি। সাজিয়ে নিচ্ছেন কোন ছবিটা পঁচিশে বৈশাখ টেবিলে রাখবেন। মোবাইলে বাজছে ‘যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে’। দূরে বসে সমস্তটা লক্ষ্য রাখছেন বাড়ির গৃহকর্তী। আসলে গৃহকর্তার যে দু’হাতে জোড় নেই। তবুও রবীন্দ্রনাথের ১৫০ রকমের ছবি এঁকে রবীন্দ্র পুরস্কার পেয়েছেন। তিনি হাওড়া জেলার বিখ্যাত শিল্পী সেখ গুলজার হোসেন।
জন্মের পর বাড়িতে যখন খুশির রোশনাই সেই সময় জানা যায় জন্ম নেওয়া ফুটফুটে শিশুটির দুটি হাত সরু ও দুর্বল। ডান হাতটি কনুই থেকে ভাঁজ হয় না। বাবা দর্জির কাজ করেন, মা বিড়ি বাঁধে। এমন সংসারে বড় ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য টুকু ছিল না। বাড়ির সকলের একটাই কথা ছিল এ ছেলে কিভাবে জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাবে। কিন্তু পড়াশোনায় মেধাবী ও আঁকার প্রতি যত্নশীল দেখে অবাক হয়ে যায় স্কুলের শিক্ষকরা। তখন থেকেই শিক্ষকরা বলতে শুরু করেন তোকে শিক্ষক হতে হবে। বই-খাতা জোগাড় করে, টিউশন না পড়েই একের পর এক ক্লাসে দুর্দান্ত রেজাল্ট করেছেন। সঙ্গে চলেছে আঁকা চালিয়ে যাওয়া। বাবাকে দর্জির কাজে সাহায্য, মাকে বিড়ি বেঁধে দেওয়া এমন কষ্টের মধ্য দিয়ে ১৯৮৩ সালে বি.কম পাশ করেন। ওই বছরেই যোগাযোগ ঘটে বিশ্ববিখ্যাত শিল্পী গোবর্ধন আশের সঙ্গে। আত্মীয়তায় পরিণত হয়ে যায়। ১৯৯০ সালে গ্রামীণ হাওড়া অমরাগড়ী যুব সঙ্ঘে গড়ে তোলেন আর্ট গ্যালারী। আমতার রসপুরে দামোদরের তীরে অগ্রগতি গণসংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে সমাজ সচেতনতার কাজে হাজার-হাজার পোষ্টার এঁকেছেন।
খড়িয়প গ্রামে দশ বাই বারো সাইজের দুটি ঘরের সামনে একটা দালান। সেখানেই সপ্তাহভর চলে স্কুলের ছেলে-মেয়েদের আঁকা শেখানো। প্রতিবছর রবীন্দ্রজয়ন্তী আসলেই প্রাণটা বিহ্বল করে ওঠে। শুরু হয়ে যায় নতুনভাবে রবীন্দ্রনাথ কে নিয়ে চর্চা। বৃক্ষের শিকড়ে রবীন্দ্রনাথ এঁকেছেন। গাছ কেটে ধ্বংস করছে এক শ্রেণির মানুষ। তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে রবীন্দ্রনাথ কে তুলে ধরেছেন। গাছ কাটা অংশের নিচে রবীন্দ্রনাথ কে এঁকেছেন। নিচে ক্যাপশনে লিখেছেন ‘তুমি লাগাও দোলা নতুন পাতায়’। শীতের সকালে খেজুর গাছে ঝুলতে থাকা হাঁড়ি এমন দৃশ্যতে রবীন্দ্রনাথের ছবি। লিখেছেন ‘প্রকৃতির সাথে মিলেমিশে একাকার’। আঁকা ছাড়াও ১৯৯৩ সাল থেকে চাকরি করছেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসাবে। দুই হাত ঠিকমতো সাধ দেয় না। শরীর অনেকটা ভেঙ্গেছে। সম্প্রতি বাম হাতে রক্ত চলাচলে সমস্যা হচ্ছিল ব্যাঙ্গালোরে গিয়ে ট্যান্সপ্ল্যান্ট করাতে হয়েছে। তবুও লড়াইটা চালিয়ে যাচ্ছেন। সেই লড়াইয়ে প্রাণ দিয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
বুধবার খড়িয়প-এর বাড়িতে দেখা গেল অনেক ছাত্র-ছাত্রীর সঙ্গে রবীন্দ্রজয়ন্তী নিয়ে আলোচনা চলছে। এসেছে প্রাক্তন ছাত্ররাও। কখনও কবিতায়, কখনও আবার গানে গল্পে জমজমাট আলোচনা। ঘরের প্রতিটি জায়গায় তুলির ছোঁয়া। দেওয়ালের ক্যানভাসে রবীন্দ্রনাথ, নজরুলের একাধিক তৈলচিত্র। ঘরের গেটে সিমেন্টের লালন ফকিরের প্রত্যয়ী ছবি। পা দিয়ে ছবি এঁকেছেন। মুখে তুলি ধরে ছবি এঁকেছেন। তবে এরপরেও গুলজার একজন ছড়াকার এবং গীতিকার। লিখেছেন কবিতা ও ছড়া-গান। শিল্পী সেখ গুলজার হোসেন জানান, ‘রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে দেড়শোর উপর ছবি এঁকেছি। সবকটাই বিভিন্ন আঙ্গিকে। আমার আঁকা বাউল চিত্র ক্যানভাসে করে গিয়েছে জার্মানে। এছাড়া বাংলাদেশ এবং নেদারল্যান্ডেও প্রশ্নংসা কুড়িয়েছে। জীবনে চলার পথে অনেক সুনাম পেয়েছি। আমার আঁকা প্রচ্ছদ প্রায় দু’শোর মতো পত্রিকায় স্থান পেয়েছে। আরও অনেক কাজ করতে চাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কে নিয়ে। তবে শরীর কতটা সাধ দেবে এটাই বড় প্রশ্ন। সমাজে ফিরে আসুক শান্তি। সবাই একসাথে বাস করি এটাই আমার ইচ্ছে। কবির সুরে শেষে বলি ‘ও আমার দেশের মাটি, তোমার পরে ঠেকাই মাথা’।
from Sting Newz | 24 x 7 Online News From Bengal http://bit.ly/2H9e1Hj
No comments:
Post a Comment
Your Message Will Riplied Within 24 Hours.
Thank You.